মাগুরা সদর উপজেলার বগিয়া ইউনিয়নের পাইকেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার এলাকা হতে রাত অনুমান ৮-৯ টার মধ্যে ঘটে ছিলো এক মর্মান্তিক দূর্ঘটনা। ঘটনা বিস্তারিত বিবরণ হলো গত বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর নুর নাহার নামের এক বোরকা পরিহিত মহিলাকে কিছু বখাটে ছেলেদের পাল্লায় পড়া নিয়ে। এরপর রাত অনুমান ১ টার সময় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কিবলু ফকির জানান, গত বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে নুর নাহার ফরিদপুর গিয়ে ছিলো মা-বাপের কাছে টাকা আনতে। বাপের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে মাগুরার উদ্দেশ্য ঢাকার রোডে আসে ৭.৩০ টার সময়। সেখান থেকে ইজিবাইক যোগে আওনাড়ার উদ্দেশ্য রওনা দেয়। ইজিবাইক অটো পাইকেল পৌছালে টায়ারের চাকার হাওয়া চলে যায়। তখন নুর নাহার অটো চালককে ৫ শত টাকার নোট দিলে অটো চালক বলে আমার কাছে ভাঙ্গতি টাকা নেই পরে দিও। এর মধ্যে গণি নামক এক ভ্যান চালক আসলে তার ভ্যানে উঠার সাথে সাথে ৪ জন লোক ভ্যানে উঠে মুখ বেধে ফেলে। এরপর বেশ কিছু দূরে যাওয়ার পর নুর নাহারকে ভ্যান থেকে নামিয়ে বাগানের মধ্যে নিয়ে দূর্বৃত্তরা নগদ ৫০ হাজার টাকা, ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, একজোড়া পায়ের রুপার নুপুর ও ১ টি বাটন মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এসময় তাকে ব্যাপক আকারে মারধর করে শরীরের গোপন অঙ্গ ও পেটে আঘাত করে নাসিকুল নামের এক যুবক। দূর্বৃত্তরা তার ইজ্জত নেওয়ার চেষ্টা করলে নুর নাহার প্রাণের ভয়ে দৌড়ে আলোকদিয়া-মহম্মদপুর রোডে উঠে পড়ে। এখনও তার গোপন অঙ্গ দিয়ে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, মাগুরা সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি, পাইকেল গ্রামের জাহাঙ্গীর জোমার্দ্দারের পুত্র বোরহান (২৫), তফছের শেখের পুত্র নাসিকুল শেখ (৩০), সাহিদুর রহমানের পুত্র তুহিন (৩১) ও শহীদ মন্ডলের পুত্র শাহিনের বিরুদ্ধে, তবে অভিযোগটি স্থগিত আছে। ভ্যানচালক গণী সেই রাতে মাগুরা সদর থানায় দারোগা ও ওসির কাছে সাক্ষী দিয়েছে। কিবলু ফকির আরও জানায়, আমি চাই ছিনতাইকারী অপরাধীদের আইনের আওতায় কঠিন শাস্তি হোক। দূবৃত্তরা তাকে ধর্ষণ করতে গেলে তখন নুর নাহার প্রাণ ও ইজ্জত বাঁচাতে সেখান থেকে পালিয়ে যায় এবং তাকে অপরাধীরা ধর্ষণ করতে পারেনি।
নুর নাহার জানান, ঘর মেরামত করার জন্য আমি ৫০ হাজার টাকা ফরিদপুর থেকে নিয়ে আসছিলাম। পাইকেল থেকে অটো নষ্ট হয়ে গেলে ৫ শত টাকা ভাঙ্গতি করতে গেলে অটোচালক দিতে পারে নাই। এরপর আমি ঐখানে পাইকেল সরকারি প্রাইমারী স্কুলের সামনে রোডের উপর থেকে দাড়িয়ে আমার স্বামী কিবলু ফকিরকে মোবাইল ফোনে দিলে সম্ভবত অপরাধী যুবকরা ফোনের নগদ টাকার কথা শুনে ফেলে। এরপর গনি নামের এক ভ্যান চালক আসলে তার ভ্যানে উঠি পড়ি। নুর নাহার মুঠোফোনে আরও জানান, ৫০ হাজার টাকা মা লোন তুলে দিয়ে ছিলো সেই টাকা নিয়ে আসতে ছিলাম মাগুরায়। পথিমধ্যে রাত হয়ে যায় বাড়ি যেতে পাইকেল এসে অটো নষ্ট হয়ে যায়। এরপর আমি একটা ভ্যানে উঠার সাথে সাথেই হাত দশেক আলোকদিয়া বাজারে যাওয়ার সময় ভ্যানে ৪ জন যুবক লোক উঠে পড়ে। এরপর কিছু দূর নেওয়ার পর নির্জন স্থানে নিয়ে আমার কাছে থাকা টাকা, স্বর্ণ- রুপার গয়না ও মোবাইল ছিনতাই করে এবং জোরপূর্বক আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে স্পর্শ ও ধর্ষণ করার চেষ্টা করে এবং প্রচুর মারধর করে। তখন আমি নিজের ইজ্জত বাঁচাতে দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, দূর্বৃত্তরা শত চেষ্টা করেও আমাকে ধর্ষণ করতে পারেনি।
ভ্যানচালক গণী জানান, বেশ কয়েকজন লোক ছিলো এই অপরাধ মূলক কাজের সাথে। তবে আমি এদের মধ্যে থেকে দুইজন লোককে চিনতে পেরে ছিলাম। তারা হলো পাইকেল গ্রামের জাহাঙ্গীর জোমার্দ্দারের পুত্র বোরহান ও একই গ্রামের তফসের শেখের পুত্র নাসিকুল শেখ। তিনি আরও জানান, আমার ভ্যানে উঠে দূর্বৃত্তরা আলোকদিয়া বাজারের পশ্চিম-উত্তর দিকে হারুন ও পারুলের বাড়ির সাথে কালিতলায় নামায়। তবে এই সময় দুইজন ছেলে ভ্যান থেকে নেমে যায়, আর তখন ৬ জনের মধ্যে ৪ জন মেয়েটিকে কালিতলার দিকে নিয়ে যায়। আমি রাত ১১.৪৫ টার সময় থানায় গেলে নুরনাহার, তার স্বামী কিবলু ফকির ও কিবলুর ছেলেকে দেখতে পাই। গোপন সূত্র থেকে জানা যায় ভ্যান থেকে নামা দুই যুবকের পরিচয় হলো বগিয়া গ্রামের সউদ বিশ্বাসের পুত্র রাব্বি ও উদ্রপাড়া গ্রামের রাজার পুত্র রঞ্জু ছিলো।
কিবলু ফকিরের বড় বৌ হেলেনা খাতুন জানান, আমার স্বামীর বাড়ি মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল পলিতা ইউনিয়নের সত্যবান গ্রামে, সে হারুন ফকিরের পুত্র। হেলেনার বাড়ি মহম্মদপুর উপজেলার আওনাড়া গ্রামের যশপুর গ্রামের আইজার ফকিরের কন্যা। তিনি বলেন, আমার সতীন নুর নাহারের দেশের বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। সে ফরিদপুর সদর উপজেলার বাগারকান্দি ইউনিয়নের বঙ্গেশ্বদী গ্রামের মজিবর মোল্যার কন্যা। ফরিদপুর বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে গিয়ে ছিলো, তার মুখে মারের দাগ আছে, শরীরে বিভিন্ন জায়গায় দাগ আছে, পেট ও গলায় পাড়া দিয়েছে। হেলেনা আরও জানায়, নুর নাহার ধর্ষণ হয়নি তবে অতিরিক্ত মারধর করার ফলে লজ্জাস্থান থেকে রক্ত ভাঙ্গতেছে। মাগুরা সদর থানায় অভিযোগ করা হয়েছে এটা আমার স্বামী কিবলু ফকিরের কাছে আছে। কানের দুল, নুপুর, মোবাইল ও টাকা খোয়া গেছে।
এব্যাপারে বোরহান, নাসিকুল ও তুহিনের বাড়ির লোকজনের কাছে শোনা হলে তাদের পরিবারের লোকজন কোন সুস্পষ্ট কথার জবাব দিতে পারেনি এবং তারা কোথায় আছে সেটাও জানায়নি। বোরহানের আম্মা দৈনিক সমাজের কথাকে বলেন, থানায় আমরা এই বিষয়টি মিটমাট করে ফেলেছি। তবে এই বিষয়ে এস আই আলামিন জানান, এরকম কোন মিটমাট করার বিষয় সম্পর্কে আমার জানা নেই।
তবে বগিয়া ইউনিয়নের সচেতন এলাবাসীর দাবি অপরাধের সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করে কঠিন শাস্তি ও জরিমানা করা হোক। এরা সব গুলোই এলাকার মধ্যে ত্রাস, দাঙ্গা, চুরি, ছিনতাইকারী ও মাদক সেবনকারী যুবক। এদের জন্য আজ বগিয়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ যুবক মাদকের কালো ছোবল ও ছিনতাইয়ের জন্য অতিষ্ঠ হয়ে গেছে এলাকাবাসীর লোকজন।